জাবিতে মধ্যরাতেও উচ্চস্বরে গান, বন্ধ করতে বলায় প্রক্টরকে গালি প্রদান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের গ্রেফতার ও দেশজুড়ে বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ‘বাউলের দ্রোহ’ শীর্ষক গানের আসর আয়োজন করেন একদল শিক্ষার্থী। রবিবার (৩০ নভেম্বর) বিকাল পাঁচটা থেকে রাত দুইটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্ত্বরে অনুষ্ঠান চলে।
এদিকে, গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে গান বাজানোয় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দীক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানমি শাহারিন বলেন, কেমন প্রশাসন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে , তা স্পষ্ট।সন্ধ্যা থেকে উচ্চ শব্দ, পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে এমন হয় জানিনা। ঘুমানোর জন্য দেড়ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছিনা।এত সাউন্ড।এই প্রশাসনের কী কিছুই আসে যায় না? শিক্ষার্থী দের কষ্ট কী তাদের কাছে কিছুই না? আর যারা এভাবে গান বাজাচ্ছেন,তারা মূলত কারা?তাদের কী কোনো সভ্যতা নেই?
আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, রাত ২টা পর্যন্ত এমন শব্দ সহ্য করা সম্ভব নয়। সাংস্কৃতিক চর্চা ভালো ব্যাপার, কিন্তু সেটা যদি অন্যের বিশ্রাম কেড়ে নেয় তাহলে সেটি সংস্কৃতি নয় বরং বিপর্যয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাত ১টা ৩০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশেদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আয়োজকদের উচ্চস্বরের গান বন্ধ করতে অনুরোধ করে বলেন, এটা আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। অন্যের অধিকার ক্ষুণ্ন করে এভাবে গান বাজানো উচিত নয়।
প্রক্টরের এ অনুরোধে ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু আয়োজক তাঁর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়ান প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য ও এক ভিডিওতে দেখা যায়, প্রক্টরের সামনে ৫১তম ব্যাচের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সজিব আহমেদ জেনিচকে গালিগালাজ করতে শোনা যায়। এর আগেও বিভিন্ন ঘটনায় তার বিরুদ্ধে গালাগালি করার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম গনমাধ্যমকে বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শব্দ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে। কারণ, তাদের পরীক্ষা চলছে, এখন পরীক্ষার মৌসুম। অনেক শিক্ষার্থী গানের উচ্চ শব্দে মাইগ্রেনের সমস্যার কথাও জানিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজকদের শব্দ কমাতে বলেছিলাম। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য অনুরোধ করলে তারা ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় চায় এবং সে সময়ের পর আমার অনুরোধে অনুষ্ঠান শেষ করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে এবং বাজে শব্দ ব্যবহার করেছে।
অন্যদিকে, রাত ১টার দিকে পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দ বন্ধ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গান চালাবেন বলে ঘোষণা দেন। পরে সোয়া একটার দিকে তাঁরা হ্যান্ডমাইক ও ছোট সাউন্ডবক্স নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে গান বাজাতে থাকেন।
তাজউদ্দীন আহমদ হল সংসদের ভিপি সিফাতউল্লাহ সিফাত বলেন, রাত ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। গানের উচ্চ শব্দে তাঁরা পড়তে পারছেন না, তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আয়োজকেরা সেসব মান্য করেননি এবং প্রশাসনেরও টনক নড়েনি। প্রশাসন যখন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, আমরা ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ গান বাজিয়েছি।
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গান বাজানো প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, পরিবহন চত্বরে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরেকদল শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয় এবং তারাও তুলনামূলক উচ্চস্বরে কিছু কার্যক্রমে অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণও কাম্য নয়।
এর আগে ১৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ১০টার পর যে কোনো প্রকার অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও অনুষ্ঠান চলমান থাকলে আয়োজকদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি/রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রাত ১০টার পর এমন আয়োজন চলতে থাকায় শিক্ষার্থীদের ঘুম ও পড়াশোনার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্দেশনা অমান্য করে ‘বাউল দ্রোহ’ নামের অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে সাউন্ড ব্যবহার করা হয়। এতে আবাসিক হল গুলোতে থাকা শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
ফেসবুক গ্রুপ ‘জাবির সকল সংবাদ’ এ বিভিন্ন শিক্ষার্থী তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। এক শিক্ষার্থী লিখেন,পরীক্ষার পড়া নিয়ে বসেছি, কিন্তু সাউন্ডের কারণে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। নিয়ম করে কী লাভ, যদি প্রয়োগ না হয়?
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল গালিব লেখেন, যতদুর জানি আজকের বাউল সন্ধ্যা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও উচ্চশব্দে পুরো সময় কনসার্ট চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে এখনো। আমাদের হল থেকেই টিকতে পারছিনা। অথচ পাশের লেকেই অতিথি পাখির আবাস।
তিনি আরও বলেন, প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে নিয়মিত চিল্লানো হিপোক্রেটরাই নিজেদের প্রোগ্রামের বেলায় প্রকৃতির কথা ভুলে গেছে। প্রাণিবিদ্যার শিক্ষার্থী হিসেবে এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নিয়মের তোয়াক্কা না করে এমন প্রোগ্রামে জাকসু নেতৃবৃন্দ, প্রশাসন ও সাংবাদিকরা নিরব কেন? ফাইনাল পরীক্ষার সময় নিয়মবহির্ভূত এমন প্রোগ্রাম চলতে থাকলে জাকসুর দরকার টা কি?
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৫১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারিহা তাবাসসুম মাওয়া বলেন, আপনারা প্রোগ্রাম করতেছেন ভালো কথা কিন্তু পুরো ক্যাম্পাস কাঁপাইতেছেন কেন?ঢাকা – আরিচা মহাসড়কের কারণে মেয়েদের হলে রাতে টিকা যায় না। তার উপর এসব প্রোগ্রামের সাউন্ড। ম্যাক্সিমাম ডিপার্ট্মেন্টের এখন ফাইনাল চলে। পরীক্ষা দিয়ে এসে আপনাদের সাউন্ডের অত্যাচারে ঘুমাতেও পারিনা। সাউন্ড সন্ত্রাস থেকে আমাদের মুক্তি দিন প্লিজ।

আপনার মতামত লিখুন