খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন; যা জানালেন নেতাকর্মীরা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘিরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চলছে টানা চিকিৎসা, আর এ পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে নিয়মিত ছুটে যাচ্ছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভোগা খালেদা জিয়াকে সাম্প্রতিক শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণ এবং শারীরিক দুর্বলতার কারণে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ভর্তি হওয়ার পরপরই দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে চিকিৎসা শুরু হলে বিএনপি নেতারা দলে দলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। বিশেষ করে মির্জা ফখরুল কয়েক দফা গভীর রাতে হঠাৎ হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি দেখেন, চিকিৎসক বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানান যে, খালেদা জিয়ার অবস্থা “স্থিতিশীল হলেও সংকটাপন্ন” পর্যায়ে রয়েছে এবং চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তিনি সবাইকে গুজবে কান না দিয়ে শুধুমাত্র হাসপাতাল বা পরিবারের তথ্যকে বিশ্বাস করার আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি বাড়তে থাকলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও হাসপাতালে উপস্থিত হন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত হন। আইনজীবী ও দলীয় উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আসিফ নজরুলও হাসপাতালে এসে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং চিকিৎসার অগ্রগতি জানতে পারেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা নিয়মিত হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ছুটে যান, বাইরে অবস্থানরত নেতা–কর্মীদের শান্ত থাকতে বলেন এবং পরিবারকে আশ্বস্ত করেন যে, দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ভিড় যাতে না বাড়ে, সে কারণে নেতাদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হলেও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের জন্য বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চিকিৎসার ধাপ আরও উন্নত করতে চীন থেকে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এই বিদেশি বিশেষজ্ঞ দল খালেদা জিয়ার নানা পুরোনো জটিলতা, বর্তমান অবস্থার বিবরণ এবং নতুন চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরিতে স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। এর ফলে চিকিৎসা প্রক্রিয়া আরও আধুনিক ও উচ্চমানের পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। তবে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে বহু জল্পনা থাকলেও মির্জা ফখরুল পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা বর্তমানে নেই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বিমানে ভ্রমণ করা তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বিদেশে নেওয়ার প্রসঙ্গ আপাতত স্থগিত থাকলেও, অবস্থার উন্নতি হলে ভবিষ্যতে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।
হাসপাতালের বাইরে প্রতিদিনই বিএনপি নেতা–কর্মীদের ভিড় দেখা যায়। কেউ প্রার্থনা করছেন, কেউ পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, আবার কেউ চোখের জল সামলাতে পারছেন না। যদিও পরিবার ও হাসপাতাল ভিড় কমানোর অনুরোধ জানিয়েছে, তারপরও খালেদা জিয়ার প্রতি মানুষের গভীর আবেগ ও রাজনৈতিক সম্পর্ক দৃশ্যমানভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা শুধু একটি ব্যক্তিগত বিষয় নয়, বরং বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক পরিসরে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার সুস্থতা নিয়ে যেমন দলীয় সমর্থকদের উদ্বেগ রয়েছে, তেমনি পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনও অপেক্ষায় আছে কখন চিকিৎসকরা সুসংবাদ দেবেন।
সব মিলিয়ে, এভারকেয়ার হাসপাতালের বাইরে ও ভিতরে এখন খালেদা জিয়াকে ঘিরে স্থির উত্তেজনা, উদ্বেগ এবং অপেক্ষার মিশ্র পরিবেশ। চিকিৎসা পর্যবেক্ষণে যুক্ত দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি মুহূর্তে তার অবস্থা মনিটর করছেন, আর বিএনপি নেতারা প্রতিদিনই গিয়ে পরিস্থিতি দেখে দলের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরছেন। দেশবাসীও সবকিছুর ওপরে একটাই কামনা করছেন—খালেদা জিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন।

আপনার মতামত লিখুন