রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ সকালেই আবার অনুভূত হলো ভূমিকম্পের কম্পন। হঠাৎ ভবন কেঁপে ওঠায় মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে। অনেকেই ঘর, অফিস, দোকানপাট থেকে দ্রুত বাইরে বের হয়ে আসেন। যদিও ভূমিকম্পটি ছিল মৃদু মাত্রার, তবে পরপর কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় মানুষের মাঝে উদ্বেগ বাড়ছে।
আজ সকাল প্রায় ৬টা ১৪ মিনিটের দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা—মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগসহ বেশ কিছু জায়গায় কম্পন টের পান সাধারণ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মুহূর্তেই মানুষ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। “হঠাৎ সবকিছু দুলে উঠল। বুঝতেই পারিনি কি ঘটছে”—এমন মন্তব্যও করেন অনেকে। বিশেষ করে উচ্চতলায় অবস্থান করা মানুষজন বেশি আতঙ্কিত হন, কারণ উঁচু ভবনে ভূমিকম্পের অনুভূতি আরো স্পষ্ট হয়।
এবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশের কাছাকাছি একটি এলাকা, তবে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য জানায়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তর। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ৪ এর আশেপাশে ছিল, যা মৃদু হলেও অস্বাভাবিক নয়। তবে রাজধানীর ঘনবসতি ও উচ্চ ভবনের কারণে কম্পন সামান্য হলেও মানুষের মনে ভয় কাজ করে।
দেশের অন্যান্য স্থানের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও হালকা কম্পন অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনেকে ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ কম্পনে ভয় পেয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দ্রুত বাইরে বের হয়ে আসেন। বিশেষত পুরনো ভবনের বাসিন্দারা বেশি আতঙ্কিত হন। গত কয়েক বছরে পুরনো ভবনগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে—এমন তথ্য থাকায় এই ধরনের ভবনে ভূমিকম্প মানুষকে বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, “বাংলাদেশ এখন ভূমিকম্প ঝুঁকির একটি সক্রিয় অঞ্চলে অবস্থান করছে। ভারতীয় প্লেট ও মিয়ানমার প্লেটের সংযোগস্থলে চাপ বাড়ার কারণে প্রায়ই মৃদু ভূমিকম্প হচ্ছে। এগুলো বড় ভূমিকম্পের আগের স্বাভাবিক সিগন্যাল হতে পারে বা নাও হতে পারে। তবে সতর্ক থাকা জরুরি।”
সম্প্রতি একাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগও সতর্কতা জারি করেছে। তারা জানিয়েছে, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতির জন্য স্থানীয় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধারকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতিও জোরদার করা হয়েছে। আগের কয়েকটি ভূমিকম্পে আতঙ্কে মানুষ সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আহত হয়েছিল, তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি না করে শান্তভাবে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া উচিত।
এদিকে, ভূমিকম্পের সময় কী করবেন—এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
- ভূমিকম্প অনুভব করলে দ্রুত ভবনের লিফট ব্যবহার করা যাবে না
- টেবিল, বেড বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে আশ্রয় নেওয়া নিরাপদ
- মাথা ও ঘাড় রক্ষার জন্য হাতে বালিশ, ব্যাগ বা বই ব্যবহার করা যায়
- যদি বাইরে থাকেন তবে ভবন, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছ থেকে দূরে থাকতে হবে
রাজধানীসহ দেশের নানা এলাকায় আজকের এই হালকা ভূমিকম্পে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে নাগরিকদের অনেকেই মনে করছেন—বারবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়া উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ, নিয়মিত পরিদর্শন ও নগর পরিকল্পনায় বিশেষ সতর্কতা এখন সময়ের দাবি।
ধারাবাহিক ভূমিকম্পে অনেকে মনে করছেন বাংলাদেশ হয়ত একটি বড় ভূমিকম্পের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন—এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়, তবে ঝুঁকি সবসময়ই থেকে যায়। তাই নগর পরিকল্পনা, অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং জনসচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের ভূমিকম্পে কোনো বড় ক্ষতি না হলেও মানুষের মনে যে আতঙ্ক জন্মেছে—তা সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্পগুলোকে আরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ছোট ছোট কম্পন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ দেশে বসবাস করছি, তাই সবসময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
এই নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক দিনে একাধিকবার ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হওয়ায় মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তবে আতঙ্ক নয়—প্রস্তুতিই আমাদের রক্ষা করতে পারে, এটাই বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ । ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ