শুধুমাত্র আবেদন করলেই ইউরোপের যেসব দেশে যাওয়া সম্ভব—এ বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশি চাকরি–প্রত্যাশী ও দক্ষ কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ শ্রমবাজার শূন্যতা পূরণে এশিয়ার দেশগুলো থেকে কর্মী নিচ্ছে, যার কারণে অভিবাসন প্রক্রিয়াও আগের তুলনায় সহজ হয়েছে। অনেক দেশে এখন আর জটিল ইন্টারভিউ বা দীর্ঘ যাচাই–বাছাই নেই; সাধারণ আবেদন করলেই সুযোগ মিলছে ভিসার, যদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও যোগ্যতা ঠিক থাকে। এই প্রবন্ধে ইউরোপের সেই দেশগুলো, ভিসার ধরন, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং আবেদন প্রক্রিয়ার মূল দিকগুলো সহজভাবে তুলে ধরা হলো।
ইউরোপের যেসব দেশে শুধুমাত্র আবেদন করলেই যেতে পারেন, তার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে ‘ডিক্রেটো ফ্লুসি’ কোটা অনুযায়ী প্রতিবছর কয়েক লাখ বিদেশি কর্মী নেওয়া হয়। কৃষি, নির্মাণ, হোটেল–রেস্টুরেন্ট, পরিচ্ছন্নতা, ড্রাইভিং, কেয়ারগিভারসহ বিভিন্ন সেক্টরে লক্ষাধিক কর্মীর প্রয়োজন হয়। আবেদনকারীর শুধু নিয়োগদাতার কনট্রাক্ট লেটার, পাসপোর্ট এবং জমা দেওয়ার প্রয়োজনীয় নথি থাকলেই ভিসা পাওয়ার সুযোগ থাকে। ইতালির ভালো দিক হলো আবেদন করা সহজ, আর অনুমোদন পেলে সরাসরি ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায়। স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগও অনেক বেশি।
অন্যদিকে পর্তুগাল দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশিসহ এশীয় কর্মীদের গ্রহণ করে আসছে। দেশটির “জব সার্চ ভিসা” বা শ্রমিক–সংগ্রহ ভিসা এখন তুলনামূলক সহজ প্রক্রিয়ায় পাওয়া যায়। আবেদনকারীরা আগে থেকেই চাকরি না পেলেও আবেদন করে ভিসা নিয়ে গিয়ে পর্তুগালে কাজ খুঁজে নিতে পারেন। কাগজপত্র সঠিক হলে এবং আর্থিক প্রমাণপত্র থাকলে পর্তুগালের ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ। এছাড়া দেশটিতে বসবাস করলে নির্দিষ্ট সময় পর পরিবার নিয়ে যাওয়ার সুযোগও রয়েছে।
রোমানিয়া বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুত কর্মী নিচ্ছে এমন ইউরোপীয় দেশগুলোর একটি। নির্মাণ, ফ্যাক্টরি, ওয়্যারহাউস, ওয়েল্ডিং, মেশিন অপারেটর, হোটেলসহ বিভিন্ন বিভাগে প্রচুর শ্রমশক্তি প্রয়োজন। এদেশে আবেদন করার প্রক্রিয়াও খুব জটিল নয়—নিয়োগদাতার ওয়ার্ক পারমিট থাকলেই দূতাবাসে আবেদন করা যায় এবং অনুমোদন দ্রুত পাওয়া যায়। অনেকের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ ছাড়াই ভিসা অনুমোদন হয়ে থাকে। কর্মীদের জন্য রোমানিয়া এখন আকর্ষণীয় কারণ চাকরির সুযোগ বেশি, আর ইউরোপের অন্যান্য দেশে ভবিষ্যতে যাওয়ার পথও সহজ হয়।
পোল্যান্ড এশীয় শ্রমিকদের জন্য বহু বছর ধরেই জনপ্রিয় একটি দেশ। কারখানা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, কৃষি, ড্রাইভিং ও লজিস্টিকস সেক্টরে হাজার হাজার কর্মী নেওয়া হয় বছরে। পোল্যান্ডের ওয়ার্ক পারমিট প্রক্রিয়া তুলনামূলক সরল এবং একবার নিয়োগকর্তার কাগজ আসলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পোল্যান্ডে কাজ করলে পরবর্তীতে আরও ইউরোপীয় দেশে কাজের সুযোগ তৈরি হয়, বিশেষ করে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাঙ্গেরি–ও বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য দরজা খুলেছে। ফ্যাক্টরি কর্মী, ওয়্যারহাউস অ্যাসিস্ট্যান্ট, প্যাকেজিং ও ইলেকট্রনিকস সেক্টরে প্রচুর নিয়োগ হচ্ছে। প্রয়োজন শুধু নিয়োগপত্র, পাসপোর্ট এবং ভেরিফাইড কাগজপত্র—ইন্টারভিউ বা বিশেষ টেস্টও অনেক ক্ষেত্রে লাগে না। হাঙ্গেরির ভিসা প্রসেস দ্রুত হওয়ায় এটি চাকরি–প্রত্যাশীদের কাছে নতুন গন্তব্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এছাড়া ক্রোয়েশিয়া, স্লোভাকিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও মাল্টা—এই দেশগুলোতেও প্রচুর দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ক্রোয়েশিয়ার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, সি–ফুড প্রসেসিং ও পরিবহন খাতে ব্যাপক জনবলের প্রয়োজন হয়। মাল্টা আইটি, হসপিটালিটি ও নির্মাণ খাতে সহজ আবেদন প্রক্রিয়ায় কর্মীর ভিসা দেয়। লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ায় কারখানা কর্মী ও ট্রাক–ড্রাইভারদের জন্য দ্রুত ভিসা অনুমোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।
যে দেশে যেতেই চান, কিছু সাধারণ বিষয় মনে রাখা জরুরি। প্রথমত—সবসময় বৈধ উপায়ে আবেদন করতে হবে, কারণ ইউরোপের দেশগুলো এখন ভিসা যাচাইয়ে অনেক কঠোর। দ্বিতীয়ত—নিয়োগদাতার কাগজপত্র অবশ্যই সত্য ও যাচাই–যোগ্য হতে হবে। ভুয়া চুক্তিপত্রে ভিসা পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তৃতীয়ত—পাসপোর্ট, পেশাগত দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এবং ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ সব নথি সঠিক হলে আবেদন দ্রুত গ্রহণ করা হয়। সবচেয়ে ভালো হয় এজেন্সি বা দালালের ওপর না ভরসা করে নিজে যাচাই করে আবেদন করার মাধ্যমে।
ইউরোপে কাজের সুযোগ বাড়ছে, সেটা সত্যি; তবে একই সঙ্গে প্রতিযোগিতাও বাড়ছে। তাই যারা ইউরোপের যেকোনো দেশে শুধু আবেদন করেই যেতে চান, তাদের উচিত সঠিক তথ্য জেনে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে এগোনো। ইতালি, পর্তুগাল, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশগুলো বাংলাদেশিদের জন্য সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে—এখন শুধু যোগ্যতা, প্রস্তুতি এবং সঠিক আবেদনই আপনাকে সেই পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এভাবে প্রস্তুত থাকলে ইউরোপে কাজের স্বপ্ন আর দূরে থাকবে না, বরং একটি বৈধ আবেদনই হয়ে উঠবে নতুন জীবনের শুরু।

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ । ৮:৪৩ অপরাহ্ণ