মস্তিষ্কে গুলি লাগা মানবদেহের সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাতগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত। এমন আঘাতের পর বেঁচে ফেরা আদৌ সম্ভব কি না—এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই আসে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে উত্তরটি একেবারে অসম্ভব নয়, তবে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং নির্ভর করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর। গুলি মস্তিষ্কের কোন অংশে লেগেছে, সেটাই সবচেয়ে বড় নিয়ামক। মস্তিষ্কের যে অংশ শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন ও চেতনা নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে আঘাত লাগলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। আবার কিছু অংশে আঘাত তুলনামূলক কম প্রাণঘাতী হলেও তা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা তৈরি করতে পারে। গুলির গতি ও শক্তিও বড় ভূমিকা রাখে; উচ্চগতির গুলি মস্তিষ্কের টিস্যুতে ব্যাপক ক্ষতি করে, যেখানে কম গতির গুলিতে ক্ষতির মাত্রা তুলনামূলক কম হতে পারে। গুলি মাথার ভেতর দিয়ে বের হয়ে গেছে নাকি আটকে আছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উভয় ক্ষেত্রেই রক্তক্ষরণ ও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে, কারণ এতে মস্তিষ্কে চাপ বেড়ে যায় এবং জীবননাশের আশঙ্কা তীব্র হয়। এসবের পাশাপাশি আহত ব্যক্তিকে কত দ্রুত উন্নত চিকিৎসা, আইসিইউ সাপোর্ট ও নিউরোসার্জারির আওতায় আনা হয়েছে, তার ওপরও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকাংশে নির্ভর করে। অনেক ক্ষেত্রে যারা মস্তিষ্কে গুলি লাগার পর বেঁচে ফেরেন, তাদের দীর্ঘ সময় কোমায় থাকতে হয় এবং পরবর্তীতে স্মৃতিভ্রংশ, কথা বলতে সমস্যা, হাত-পা অবশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো জটিলতার মুখে পড়তে হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে এসব প্রতিবন্ধকতা আজীবন রয়ে যায়। যদিও বিশ্বে এমন কিছু ব্যতিক্রমী উদাহরণ রয়েছে যেখানে মানুষ মস্তিষ্কে গুলি লাগার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, তবুও চিকিৎসকরা এটিকে নিয়ম নয়, বরং বিরল ঘটনা হিসেবেই দেখেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন আঘাতের পর প্রথম ৭২ ঘণ্টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়, এই সময় শরীর ও মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়াই ভবিষ্যৎ অবস্থা অনেকটা নির্ধারণ করে। তাই মস্তিষ্কে গুলি লাগার পর বেঁচে ফেরা সম্ভব হলেও তা নির্ভর করে ভাগ্য, দ্রুত চিকিৎসা ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সমন্বয়ের ওপর।

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ । ১:৩৫ অপরাহ্ণ